শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০১০

বছরে প্রায় শতকোটি টাকা আয়



চলনবিলের সহস্রাধিক ঝিনুক সংগ্রহকারী বছরে প্রায় শতকোটি টাকার ঝিনুক ও মুক্তার ব্যবসা করে থাকে। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর জেলার বিশাল অঞ্চল নিয়ে চলনবিল এবং পাবনার সুজানগরে গাজনার বিল অবস্থিত। এই চলনবিল ও গাজনারবিল থেকে প্রতি বছর প্রায় একশ' কোটি টাকার ঝিনুক ও মুক্তা কুড়ায় শ্রমিকরা। এরা ঝিনুক শ্রমিক ও চুনকার নামে পরিচিত। এই ঝিনুক থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ মুক্তা সংগ্রহ হয় তার দাম প্রায় ১০০ কোটি টাকা। আর এই ঝিনুক থেকে তৈরি হয় মুরগি ও মাছের খাবার এবং পান খাবার চুন। এখানকার চুন উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চলনবিল ও গাজনার বিল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ঝিনুক সংগ্রহ করছে একশ্রেণীর পেশাজীবী শ্রমিক। এদের পরনে চাকচিক্যময় পোশাক না থাকলেও এরা প্রতিদিন রোজগার করে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। কাকডাকা ভোর থেকে দলে দলে এরা ঝিনুক কুড়াতে আসে বিলে। বিরামহীনভাবে এদের কার্যক্রম চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধায় বাড়ি ফিরে বস্তা বস্তা ঝিনুক আর অমূল্য সম্পদ মুক্তা নিয়ে।
প্রতিদিনের কুড়ানো ঝিনুক বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে এসে পাইকারি কিনে নিয়ে যায়। এই ঝিনুক দিয়ে তৈরি হয় মুরগির খাবার, মাছের খাবার ও পান খাবার চুন। প্রতি বস্তা ঝিনুক সংগ্রহকারীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করে প্রতিমণ ৫০/৬০ টাকায়। এক মণ ঝিনুক থেকে চুন তৈরি হয় ৩০ কেজি, যা প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২০ টাকা দরে। এ ছাড়া প্রতিদিন একেক জন শ্রমিক ৫০ থেকে ৭৫ রতি মুক্তা সংগ্রহ করে কুড়ানো এসব ঝিনুক থেকে। অপরিশোধিত এসব মুক্তা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করে প্রতি রতি ১০ টাকায়। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর গুচ্চি গ্রামের ঝিনুকের মহাজন নিখিল কুমার সরকার সমকালকে জানান, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলাতেই ৪ শতাধিক শ্রমিক এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তার জানা মতে, পাবনা জেলায় এক হাজার শ্রমজীবী মানুষ ঝিনুক সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত।
এসব শ্রমিক ঝিনুক ও মুক্তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী। তাদের মধ্যে অধিকাংশই পূর্ব পুরুষের পেশা থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আবার অনেকেই কোনো পুঁজি না থাকায় এই পেশা বেছে নিয়েছে। ঝিনুক শ্রমিক রমেশ সরকার সমকালকে বলেন, আমরা সারা বছর ঝিনুক কুড়াই, যা বিক্রি করে অনেক টাকা পাই। সে সঙ্গে মুক্তা বিক্রির টাকা সম্পূর্ণটাই বাড়তি আয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন